Skip to content
Home » কৃতজ্ঞতা বোধ ও বিনয়ীতা মানুষকে অনেক মহান করে তুলে (অনুপ্রেরণা গল্প)

কৃতজ্ঞতা বোধ ও বিনয়ীতা মানুষকে অনেক মহান করে তুলে (অনুপ্রেরণা গল্প)

অনলাইন ডেস্ক :

ড. মুহাম্মদ খানী বলেন, একদিন আমি আমার গাড়িতে বসা ছিলাম, হঠাৎ আনুমানিক ১৬ বছর বয়সী এক বালক এসে আমাকে বলল, স্যার আমি কি আপনার গাড়ির সামনের গ্লাসগুলো পরিস্কার করে দিতে পারি?
আমি বললাম : হ্যা।

সে অত্যন্ত সুন্দর করে গাড়ির গ্লাস পরিস্কার করে দিলো। তখন আমি তার হাতে ২০ডলার গুজে দিলাম।
ছেলেটি কিছুটা অবাক হয়ে বলল, স্যার! আপনি কি আমেরিকায় থাকেন?

আমি বললাম : হ্যা। কেন?
সে বলল, এই ২০ ডলারের পরিবর্তে আমি কি সেখানকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিষয়ে কিছু তথ্য জানতে পারি?
তার বিনয় ও লেখাপড়ার প্রতি আগ্রহ দেখে আমি তাকে আমার কাছে ডেকে নিয়ে তার সঙ্গে কথাবার্তা শুরু করে দিলাম।

কথাবার্তার শেষ দিকে তাকে জিজ্ঞাসা করলাম এভাবে তুমি রাস্তায় গাড়ি পরিস্কারের কাজ করে বেড়াচ্ছ কেন তুমি তো একজন মেধাবী ছাত্র?
উত্তরে সে বলল, আমার দু বছর বয়সেই আমার বাবা মারা যান। আমার মা মানুষের বাড়িতে বুয়ার কাজ করেন। আমি এবং আমার ছোট বোন বাইরে টুকটাক কাজ করি, বাড়তি কিছু রোজগারের জন্য। যা দিয়ে আমাদের লেখাপড়ার খরচ চলে। আমি শুনেছি আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নাকি মেধাবী ছাত্রদের উচ্চতর লেখাপড়ার জন্য স্কলারশিপ দেয়। আমার খুব ইচ্ছা সেখানে পড়ার।
কিন্তু এ বিষয়ে আমাকে সাহায্য করার মতো কেউ তো নেই।

আমি বললাম চল আগে আমরা একসাথে ডিনার করি। সে বলল একটি শর্তে রাজি হতে পারি। আর তা হল বিনিময়ে আমি আপনার গাড়ির পেছনের গ্লাসগুলোও পরিস্কার করে দেব।

আমি কথা না বাড়িয়ে তা মেনে নিয়ে হোটেলে ঢুকলাম। খাবার অর্ডার করলে সে ওয়েটারকে বলল তারগুলো পার্সেল করে দিতে। সে বাসায় গিয়ে তার মা আর বোনকে নিয়ে খাবে। খেয়াল করলাম তার ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা অসামান্য।

বিদায় নেওয়ার সময় সিদ্ধান্ত হল সে তার কাগজপত্রগুলো আমাকে দিবে, আমি সাধ্যমতো চেষ্টা করব।
এভাবে দীর্ঘ ছয়মাস পর আমি তাকে আমেরিকা এনে ভালো একটি প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করতে সক্ষম হলাম। সে তার তার মেধা ও অধ্যাবসায়ের জোরে কয়েক বছরের মধ্যেই আধুনিক টেকনোলজির কনিষ্ঠ টেক ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। নিউইয়র্ক টাইমসের পাতায় তাকে নিয়ে লিড নিউজ হলে সারা বিশ্বে হইচই পড়ে যায়।

তার ঈর্ষনীয় সফলতায় আমি ও আমার পরিবার যারপরনাই আনন্দিত হই। এদিকে তাকে না জানিয়ে তার মা ও বোনের ভিসা ব্যবস্থা করে আচমকা তার সামনে আমেরিকায় নিয়ে এসে তাকে বড়সড় সারপ্রাইজ দিয়ে চমকে দেই। তাদের দেখে সে বোবা বনে যায়। এমনকি কাঁদতে পর্যন্ত ভুলে যায়।

এখন সে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সেরা শিক্ষকদের একজন। তারও কিছুদিন পর আমি একদিন বাসা থেকে রাস্তার দিকে তাকিয়ে বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যাই। দেখি সে বাইরে দাঁড়িয়ে আমার গাড়ির গ্লাসগুলো পরিস্কার করছে! তাড়াতাড়ি দৌড়ে গিয়ে তাকে বাধা দিয়ে বলি এগুলো কি করছো?
সে অশ্রুসজল চোখে বলল, ছাড়ুন স্যার! আমাকে আমার কাজ করতে দিন। যেন আমি আমার পরিচয় ভুলে না যাই। আমি মনে রাখতে চাই আমি কি ছিলাম আর আজ কি হলাম। এবং আপনি আমার জন্য কী করেছেন।

গাড়ির গ্লাস পরিস্কার করা ছেলেটি হল ফিলিস্তিনি যুবক ফরিদ আব্দুল আলী। যিনি বর্তমানে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রসিদ্ধ তরুণ প্রফেসর।

(সংগৃহীত)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *